ওমানে ন্যূনতম আয়ের সুযোগ থাকলে দেশে না ফেরার অনুরোধ



[ad_1]

তেলের দরপতন আর করোনায় পর্যুদস্ত ওমানে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশের কর্মীরা। ছবি: রয়টার্স ওমানের অভিবাসী শ্রমিকের বড় অংশই বাংলাদেশি। সেখানে প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীর মধ্যে লাখ দেড়েক নানা কারণে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। করোনায় সংক্রমিত কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে তাড়িয়ে ফিরছে হারানোর আশঙ্কা আশঙ্কা। ধৈর্য ধৈর্য ধৈর্য ধৈর্য অ নুরোধ জানিয়েছেন ওমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ গোলাম সারওয়ার। ওমানে ন্যূনতম আয়ের সুযোগ থাকলে তিনি তাঁদের দেশে না ফেরার অনুরোধ করেছেন।

বছর তিনেক আগে তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে কিছুটা আগ্রাসীভাবে এগোচ্ছিল ওমান। তেলের অব্যাহত দরপতনে ধাক্কা লাগে দেশটির অর্থনীতিতে। সবশেষে করোনার ছোবল দেশটিকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশটি এখন পর্যন্ত ভালোই সামলাচ্ছে।

তেলের দরপতন আর করোনায় পর্যুদস্ত ওমানে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশের কর্মীরা। কারণ মধ্যপ্রাচ্য সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) অন্যতম সদস্যদেশ ওমানের অভিবাসী শ্রমিকের বড় অংশই বাংলাদেশি। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ কর্মী নানা কারণে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন।

খাবারের কষ্ট আর চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের ভয়ে থাকা বাংলাদেশের অভিবাসীদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন মোহাম্মাদ গোলাম সারওয়ার। গতকাল শনিবার প্রবাসীদের কাছে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে আর্থিক ও মানসিক কষ্টের মধ্যে আছে। কিন্তু যদি বৈধভাবে ওমানে আয় করার ন্যূনতম সুযোগ থাকে, তবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত না গিয়ে ওই দেশে কাজ করলে বেশি সুবিধা হবে।

বিদেশ থেকে এই মুহূর্তে লাখ লাখ লোক দেশে ফিরে গেলে নতুন জীবনজীবিকার ক্ষেত্রে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এই আশঙ্কা প্রকাশ করে গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘আপাতত কষ্ট করে হলেও বিদেশে থাকার চেষ্টা করুন। কারণ, আমার দৃঢ় বিশ্বাস পৃথিবীর সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে অন্য দেশের মতো ওমানও সহসাই ইনশা আল্লাহ ঘুরে দাঁড়াবে। ‘
অভিবাসীদের বড় অংশ বাংলাদেশের। ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা আর প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব মিলিয়ে ওমানে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় আট লাখ, ভারতের সাত লাখ, পাকিস্তানের আড়াই লাখ; বাকি আড়াই লাখের মধ্যে রয়েছেন মিসর, নেপাল, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক। বাংলাদেশের আট লাখ কর্মীর মধ্যে দেড় লাখের মতো বেশি অবৈধ।

জানা গেছে, বাংলাদেশের অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়া কর্মীদের বড় অংশই গেছেন ফ্রি ভিসার মাধ্যমে। অর্থাৎ, সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করার জন্য তাঁরা ওমানে যাননি। ফ্রি ভিসায় শুধু ওমান নয়, মধ্যপ্রাচ্যের যেখানেই গেছেন, সেখানেই সংকটে পড়েছেন বাংলাদেশের কর্মীরা। ফ্রি ভিসার পাশাপাশি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, ওমানে অবস্থানের যথাযথ কাগজপত্র না থাকা ইত্যাদি নানা কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের কর্মীরা।

ওমানের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ওমানের শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হওয়ায় সরকার তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়োগকর্তাদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছে। ফ্রি ভিসায় ওমানে অবস্থানরত অভিবাসীরা হাসপাতালে যাওয়ার প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরে থাকছেন। কারণ, হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গেলেই তাঁদের অবৈধভাবে ওমানে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দূতাবাসের কর্মকর্তা ও ওমানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসাসহ বিশেষায়িত কাজ করছেন — এমন লোকজন গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের কর্মীদের বেশির ভাগই কোনো না কোনোভাবে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তা ছাড়া নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা পেশা এবং ওয়ার্কশপে কাজ করেন বাংলাদেশের নাগরিকেরা। করোনার কারণে মাস দুয়েক ধরে ছোটখাটো ওয়ার্কশপ, সেলুন ও লন্ড্রি বন্ধ। এগুলোতে মূলত বাংলাদেশের লোকজন কাজ করেন। খুব স্বাভাবিকভাবে কাজ বন্ধ থাকায় এরাও পড়েছেন খাবারের সংকটে। ফলে শুধু অবৈধ নয়, কাজ বন্ধ না থাকলে আয় নেই, খাবার নেই — এমন বাংলাদেশি কর্মীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আর অর্থনীতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কেটে যাওয়া পর ঘুরে না দাঁড়ালে চাকরির ধাক্কা তো আছেই।

খাবারের সংকটে থাকা বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য দূতাবাসের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, দূতাবাস এখন পর্যন্ত অঞ্চল ভাগ করে স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় ওমানের বিভিন্ন অংশে প্রায় চার হাজার বাংলাদেশিকে খাবার দিয়েছে। আরও সাড়ে সাত হাজার বাংলাদেশির কাছে খাবার সরবরাহ করতে যাচ্ছে। মূলত বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান প্রাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কর্মীদের মধ্যে খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, লকডাউনের কারণে ওমানের বিভিন্ন শহরে নির্বিঘ্নে খাবার পৌঁছানো সহজ হয়নি। দূতাবাসের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা থাকায় ওমানে থাকা সচ্ছল বাংলাদেশিদের কাছ থেকে অভিবাসী কর্মীদের জন্য খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

তবে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি অভিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের যে পরিমাণ লোকের খাবারের সংকট রয়েছে, সে তুলনায় দূতাবাসের সাহায্যের পরিমাণ মোটেই যথেষ্ট নয়। দূতাবাস এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করেছে এবং ভবিষ্যতে করবে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লোক খাবারের সংকটে পড়েছেন। তাঁদের আরও অনেক বেশি সাহায্য – সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান তাঁরা।

জানা গেছে, ওমান সোশ্যাল ক্লাব বাংলাদেশ প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশির মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে গড়া সংগঠনটি ভবিষ্যতে অভিবাসীদের মধ্যে খাবার বিতরণ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে।

ভবিষ্যৎটা আশাব্যঞ্জক নয়
অভিবাসী কর্মীদের বড় অংশই বাংলাদেশের বলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সময় নিলে, করোনার পরের সময়টায় বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেতই বলা যায়।

এই পরিস্থিতি আগামী তিন থেকে ছয় মাসে বাংলাদেশে কী পরিমাণ অভিবাসী ফিরে আসবেন, জানতে চাইলে গোলাম সারওয়ার এই প্রতিবেদককে বলেন, এখনই সংখ্যাটা আঁচ করা মুশকিল। সবটাই নির্ভর করবে অর্থনীতি কীভাবে আর কত তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অর্থনীতি চাঙা হতে সময় নিলে তা বাংলাদেশের অভিবাসীর জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে আসবে। কত বাংলাদেশিকে দেশে ফিরতে গবে, তা এখন পর্যন্ত ওমান জানায়নি। তবে এখানকার বেশ কয়েকটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান জানিয়ে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশের কর্মীদের চুক্তি আর নবায়ন করছে না। তাঁদের সংখ্যা পাঁচ শর বেশি।

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওমান থেকে আগামী কিছুদিনের মধ্যে অন্তত দেড় হাজার অভিবাসীকে দেশে ফিরতে হবে।

করোনার সামাল ভালোভাবেই
চার দশকের বেশি সময় ধরে মাস্কাটে রয়েছেন ওমান সোশ্যাল ক্লাব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এম এন আমিন। নির্মাণ ব্যবসায় জড়িত এম এন আমিন শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বছর তিনেক ধরে অর্থনীতিতে মন্দা যাচ্ছে। একই সঙ্গে করোনাও দেশটির সংকটকে জটিল করে তুলেছে। যদিও করোনা পরিস্থিতি ওমান ভালোভাবেই সামলাচ্ছে। মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে কোনো রকম দুর্বলতা দেশটি দেখায়নি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের শনিবারের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন ১৭ জন। সংক্রমিত ৩ হাজার ২২৪ জন। মারা যাওয়া ও সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে অর্ধেকেই বিদেশি বলে বলা হচ্ছে। তবে কোন দেশের নাগরিক কতজন, তা দেশটি জানাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে গোলাম সারওয়ার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে সংক্রমিত আর মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যা কত, তা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও জানতে পারিনি। দেশটি এ নিয়ে কোনো তথ্য জানাতে তাদের অপারগতার কথা জানিয়েছে। তবে ওমান নিজের নাগরিকের পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকদের চিকিৎসার সব ভার নিজেদের কাঁধে নিয়েছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আশ্বস্ত হওয়ার ব্যাপারও রয়েছে। ‘

কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, ওমানে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিদেশি। সেই হিসাবে বাংলাদেশের কয়েক শ নাগরিক দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎটা বলে দেবে তেলের দাম
সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর ওমানে বাংলাদেশের অভিবাসীদের জীবনকে চরম অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তেলের দাম আবার বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের কর্মীদের কাজ হারানোর শঙ্কাটা কেটে যাবে। এরপরও বাংলাদেশের কর্মীদের একটা অংশকে — বিশেষ করে অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনের জন্য ভবিষ্যৎটা ভালো নয়। একসঙ্গে না হলেও তাঁদের বড় অংশকে আগে বা পরে চলে আসতে হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।



[ad_2]