গোলায় উঠেছে ধান, কিন্তু দাম কম



[ad_1]

বোরো ধান তোলার পর তা শুকাতে ব্যস্ত গ্রামের নারী-পুরুষেরা। গতকাল দুপুরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রামপুর এলাকায়। ছবি: এম সাদেক বন্যার ভয় কেটে গেছে, বেশির ভাগ ধান কাটাও শেষ। হাওরের বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন ভেজা ধান আশুগঞ্জসহ বড় মোকামগুলোতে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু তিন দাম দ্রুত পড়ে যাচ্ছে। মাথায় ঋণের, অন্য আয়রোজগারও বন্ধ। তাই ধান বিক্রির টাকাই কৃষকের এখন বড় সহায়। কিন্তু দাম কমলে উৎপাদন খরচও তুলতে পারবে ন কৃষক. সরকার ধানের যে সংগ্রহমূল্য ঠিক করে দিয়েছে, এখন তার অর্ধেক দামে ধান বিক্রি হচ্ছে.

গতকাল সোমবার দেশের হাওর ও মধ্যাঞ্চলের জন্য ধানের সবচেয়ে বড় বেচাকেনার জায়গা আশুগঞ্জে দেখা গেল, কৃষক ধান বিক্রি করতে না পেরে মন খারাপ করে বসে আছেন।

কথা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের কৃষক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। ৫৪০ টাকা মণ দরে ৩০৬ মণ মোটা ভেজা ধান বিক্রি করছেন তিনি। হঠাৎ দাম কমানোর কথা বললে ধান বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেই ধান ৫২০ টাকা দরে ​​বিক্রি করেন হাবিবুর। দেশের হাওরাঞ্চলের উৎপাদিত ধানের সবচেয়ে বড় হাট এখানেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার ধান কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নৌপথে এই ঘাটে নিয়ে আসেন।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের চামড়া নৌবন্দরে দৈনিক হাজার হাজার মণ ধান বেচাকেনা হয়। সেখানে ধান বেচতে আসা কৃষক মনিরুল
ইসলাম বলেন, সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা মণ নির্ধারণ করলেও তাঁদের বেচতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

এবার হাওরে বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সময়মতো ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা জাগলেও সবার সম্মিলিতি প্রচেষ্টায় সেই বাধাও কেটে গেছে। তবে কষ্টের ঘামে ফলানো ধানের দাম নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না কৃষক।

সরকার এবার ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে বোরো ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে সংগ্রহ করা হবে এই ধান। ২৬ এপ্রিল থেকে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হাওরপাড়ের কোনো জেলাতেই তা শুরু হয়নি। বেশির ভাগ জেলায় চলছে কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি আর ঋণের টাকা পরিশোধের তাগাদা থেকে পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি করছেন কৃষক। সেখানে দাম মিলছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।

সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল ২৬ এপ্রিল। এখন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ১১ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হবে। গত বুধবার কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক সুনামগঞ্জে এসে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া মুস্তফা বলেছেন, হাওরে এখনো ধান কাটা চলছে। কৃষকেরা মাঠে। তাঁদের সুবিধার্থে ক্রয় কার্যক্রম কিছুদিন পেছানো হয়েছে। আশা করছেন, ১০ এপ্রিলের মধ্যে কৃষক নির্বাচনের কাজ শেষ হবে।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি অধিদপ্তর ও স্থানীয় কৃষক সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন। গত রোববার পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে প্রায় ৯৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।

বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, করোনার প্রভাবে এবার স্থানীয় বাজারগুলোতে মহাজনেরা ধান কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সরকারিভাবে দ্রুত ধান ক্রয় শুরু না হলে প্রান্তিক কৃষকেরা স্থানীয় হাটবাজারে ও মহাজনদের কাছে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। এলাকার বাজারে এখন প্রতি মণ ধান সর্বোচ্চ ৬৪০ থেকে ৬৫০ টাকা। এই দরে ধান বিক্রি করলে কৃষকের লোকসান হবে। সরকার পুরোদমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ত।

সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মনোজ কান্তি দাস চৌধুরী বলেন, তালিকা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করা হবে। তালিকায় থাকা কৃষক তাঁর কার্ড অন্য কাউকে হস্তান্তর না করলে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিতে পারবেন না।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ভৈরব এবং প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ধরমপাশা ও সিলেট অফিস]



[ad_2]