[ad_1]
পুরান ঢাকায় পাইকারি ও খুচরা দোকান খুলেছে। রাস্তায় মানুষের চলাচল বেড়েছে। কোথাও কোথাও সেই আগের মতো যানজট তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও পুরোনো রূপে ফিরছে পুরান ঢাকা।
ঢাকাসহ সারা দেশে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলার সুযোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার পুরান ঢাকার টিকাটুলী থেকে শুরু করে ওয়ারী, নবাবপুর রোড, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, মৌলভীবাজার, চকবাজার, উর্দু রোড ও ইসলামপুর ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
টিকাটুলী এবং ওয়ারীতে পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিকসহ অন্যান্য পণ্যের দোকান খুলেছে। নবাবপুর রোড এলাকায় বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও পণ্য ওঠানো-নামানো ও সরবরাহ করতে দেখা গেছে। নাজিমুদ্দিন রোডে আসবাব ও অন্যান্য দোকান খোলা ছিল। মৌলভীবাজারে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য পণ্যের বেচাকেনা চলতে দেখা গেছে।
চকবাজারে প্লাস্টিক, খেলনা, গয়না ইত্যাদি মনিহারি পণ্যের দোকান খুলেছে। উর্দু রোডে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী পাইকারি পোশাকের দোকানে কেনাবেচা চলছে। ইসলামপুরে পাইকারি পোশাক ও বস্ত্রের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বেচাকেনা করছে।
যেটা খুব বেশি দেখা যায়নি, সেটা হলো স্বাস্থ্য সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ছোট ছোট দোকানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন ছিল। তবে বেশির ভাগ দোকানে ক্রেতা কম থাকায় ভিড় দেখা যায়নি।
প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে যারা পুরান ঢাকায় শাখা খুলেছে, তারা অন্যান্য এলাকার মতো সেখানেও একই সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই সব দোকানে ঢোকার মুখে হাতে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেওয়া, ব্লিচিং পাউডার গোলানো পানিতে জুতা পরিষ্কার করে প্রবেশ, তাপমাত্রা মাপা এবং মাস্ক পরার চিত্র দেখা গেছে।
কিন্তু ছোট দোকান ও পাইকারি মার্কেটে এসব ব্যবস্থা দেখা যায়নি। কর্মী ও ক্রেতাদের গা – ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাবেচা করতে দেখা গেছে। বেশির ভাগের মাস্ক ছিল, তবে থুতনিতে। অনেকের তা – ও ছিল না।
তবে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, তাঁরা সমিতির সভা করে নানা সুরক্ষাব্যবস্থা নেওয়া এবং তা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। উর্দু রোড অভ্যন্তরীণ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক বলেন, ‘আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তদারকির জন্য ছয়টি দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কাল থেকে (মঙ্গলবার) আরও কঠোর হব। ’
বেলা একটার দিকে হাটখোলায় অভিসার সিনেমা হলের আশপাশে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা ও হকার মিলিয়ে মোটামুটি সমাগম দেখা যায়। টিকাটুলীতেও দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। আবার কিছু ছিল বন্ধ।
কেনাকাটার জন্য ওয়ারীতে সবচেয়ে ভালো জায়গা র্যাঙ্কিন স্ট্রিট। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সুপরিচিত ব্র্যান্ডের সব শাখাই খোলা রয়েছে। স্থানীয় পোশাক, জুতা, প্রসাধন ও অন্যান্য পণ্যের দোকান খোলা। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা ও রিকশা চলছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। তবে দোকানগুলোতে ক্রেতা ছিল দু-একজন করে।
অ্যাপেক্সের শোরুমে ঢুকতেই নিরাপত্তাকর্মী হাতে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দিলেন। ব্লিচিং পাউডার গোলানো একটি ট্রে দেখিয়ে বললেন সেখানে পা ভিজিয়ে যেতে। সবার মুখেই মাস্ক ও হাতে দস্তানা ছিল। ব্যবস্থাপক সুধীর রঞ্জন বললেন, ক্রেতা কম। সামনের দিনগুলোতে হয়তো বাড়বে।
ওয়ারীতেই ইসরাত ফ্যাশন নামের একটি পোশাকের দোকানে একা বসে ছিলেন বিক্রেতা মো. আমির হোসেন। কোনো ক্রেতা ছিল না। ছিল না কোনো সুরক্ষাব্যবস্থাও। বললেন, বেচাকেনার অবস্থা মোটেও ভালো নয়।
ওয়ারীর তুলনায় চকবাজার, উর্দু রোড ও ইসলামপুরে মানুষের চলাচল অনেক বেশি দেখা গেল। চকবাজারে যাওয়ার জন্য ঢুকলাম নাজিমুদ্দিন রোড দিয়ে। শুরুতেই যানজট। নীরব হোটেলের পর যানজট কিছুটা কমল। আবার শুরু হলো জেলগেটের সামনে। চকবাজার মোড়েও বেশ যানজট।
নওয়াবপুর রোডে ঢোকাই কঠিন। বেশির ভাগ দোকান বন্ধ। কিন্তু রাস্তায় পণ্য ওঠানো-নামানো ও সরবরাহের কাজ পুরোদমে চলছে। বিক্রেতারা জানান, এসব বেচাকেনা হচ্ছে ফোনে ফোনে। বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন।
নবাবপুর রোডের ইলেকট্রিক মার্কেটের একটি দোকানের কর্মী মো. সজল বলেন, বৈদ্যুতিক পণ্যের চাহিদা মোটামুটি ভালো। খুচরা দোকানমালিকেরা এখন ফোনে সরবরাহ আদেশ দিচ্ছেন। এখন পণ্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। দোকানপাট বন্ধই ছিল। ৪৫ দিন পর গত রোববার থেকে তা সীমিত পর্যায়ে (সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা) খুলে দেওয়া হয়। যদিও ঢাকার বড় বড় শপিং মল খোলেনি। বড় ব্র্যান্ডের চেইনশপ ও রাস্তার পাশের দোকান খুলেছে। সব জায়গায় ক্রেতার উপস্থিতি কম।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৪ অথবা ২৫ মে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ফলে অল্প কয়েক দিন কেনাবেচার সুযোগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা অবশ্য অল্প বেচাকেনাতেই খুশি। তাঁদের বক্তব্য হলো, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।
বঙ্গবাজারের শুভ গার্মেন্টসের মালিক নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, রোববার তিনি গুদাম থেকে দেড় লাখ টাকার পোশাক পাইকারি বিক্রি করেছেন। ঈদের আগে যদি আরও কিছুদিন এমন বেচাকেনা হয়, তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা মোটামুটি বিক্রি করছি। ইসলামপুরের সব কর্মচারী বেতন-ভাতা পাবেন। যাঁরা বন্ধের সিদ্ধান্ত দেন, তাঁদের তো বেতন দেওয়ার ঠেকা নেই। ’
[ad_2]