[ad_1]
স্পোর্টস ডেস্ক
করোনাভাইরাসের কারণে অসহায় দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২০১৭ সালে হ্যাটট্রিক করা বলটি নিলামে তোলেন তাসকিন আহমেদ। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে শতক হাঁকানো ব্যাটটি দেন সৌম্য সরকার। দুইজনের দেওয়া ব্যাট-বল ‘অকশন ফর অ্যাকশন’ নামক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে নিলাম তোলা হয়। তাসকিনের বল এবং সৌম্যের ব্যাট উভয়ের ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত তাসকিনের হ্যাটট্রিক করা বলটি ৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর সৌম্যের ব্যাটটি বিক্রি আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি- সাড়ে ৪ লাখ টাকায়।
ব্যাট ও বলটি নিলাম থেকে সর্বোচ্চ দাম দিয়ে কিনে নিয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংক। তবে ব্যাংকের নাম তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। ‘অকশন ফর অ্যাকশন’ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের তরফ থেকে জানানো হয়েছে- ব্যাট এবং বল কিনে নেওয়া ব্যাংকের নাম পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।
২০১৭ সালে তখন বেশ নিয়মিতই জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চ কাঁপিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। বল হাতে উপভোগ করছিলেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়। আর তারই রোষানলে পড়েছিল লংকান দল। শ্রীলংকার বিপক্ষে ডাম্বুলায় ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফিল্ডিং করতে নামে টাইগাররা। ইনিংসজুড়ে লংকানদের দাপুটে ব্যাটিংয়ের পর শেষ ওভারে বাংলাদেশের নাটকীয় প্রত্যাঘাত। টানা তিন বলে তিন উইকেট নিলেন তাসকিন। শেষ ওভারে তার দুরন্ত হ্যাটট্রিকে এক বল বাকি থাকতেই অলআউট শ্রীলংকা।
ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে পাঁচ রান দেওয়ার পর আচমকা ঝলসে ওঠেন বাংলাদেশের এই গতি-তারকা। তৃতীয় বলে তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিডঅফে সৌম্য সরকারের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হন আসেলা গুনারত্নে। পরের বলটিও ছিল ফুল লেংথ। এবার উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সুরাঙ্গা লাকমাল। হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে পঞ্চম বলটি তাসকিন করলেন ইয়র্কার। নুয়ান প্রদীপের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিল বল। হ্যাটট্রিক! বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করলেন তাসকিন। ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের ৯ ম ওভারের ৩ য়, ৪ র্থ ও ৫ ম বলে তাসকিন ফেরান আসেলা গুনারত্নে, সুরাঙ্গা লাকমাল ও নুয়ান প্রদীপকে।
নিশ্চিতভাবেই হ্যাটট্রিক করা ওই বলটি তাসকিনের খুবই পছন্দের তবে দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যার্থেই নিজের পছন্দের সামগ্রী প্রদান করলেন তাসকিন। আর এই বল এবং নিলাম সম্পর্কে বললেন, ‘হ্যাটট্রিকের বল আমার জন্য অনেক স্পেশাল। কেবল হ্যাটট্রিকেরটা না পাঁচ উইকেট পাওয়া প্রত্যেকটা বলই আমার কাছে খুব স্পেশাল। আর আমি যখন দেখলাম অনেকে তাদের প্রিয় জিনিস নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাই আমারও মনে হলো আমার প্রিয় একটা জিনিস নিয়ে এই করোনাভাইরাসের সময়ে এগিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। তাই এই বল নিয়েই আমি এগিয়ে এসেছি। ‘
তাসকিন আরো বলেন, ‘হ্যাটট্রিক করতে আসলে স্কিলের থেকে বেশি লাগে ভাগ্য। ডেব্যু ম্যাচে পাঁচ উইকেট পাওয়া বলটা হারিয়ে গেছে না হলে আমি ওটাই দিতাম। কারণ ওই বলটা আমার কাছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার আরো অনেক কাছের ছিল বলটি। ‘
এদিকে তাসকিনের সঙ্গে সঙ্গে সৌম্য সরকার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৪ বলে করা প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির ব্যাটটিও নিলামে তোলেন। হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে ২০১৯ সালের মার্চে সৌম্যের ব্যাট থেকে আসে তার ক্যারিয়ারের প্রথম এবং একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরিটি।
হ্যামিল্টনে কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে সৌম্য সরকারের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ৬ উইকেটে করা ৭১৫ রানের পাহাড়ে চাপা পড়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন সৌম্য। শুরুতে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি। পরে অবশ্য আরও আগ্রাসী হয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। ৯৪ বলে সেঞ্চুরি তুলে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ২৩৫ রানের জুটি গড়া সৌম্য আউট হয়ে ফেরেন ১৪৯ রান করেন।
প্রিয় ব্যাটটি দেওয়া সম্পর্কে সৌম্য বলেন, ‘অবশ্যই যেকোনো একটা ব্যাটসম্যানের জন্য সেঞ্চুরি একটা বড় বিষয়। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ব্যাট করতে নামার আগে রাতে প্র্যাক্টিস করছিলাম। তো সেদিন রাতে ‘এসএস’ আমার ব্যাটের স্পন্সরদের কাছ থেকে আমার দুইটা ব্যাট আসে। তো পরেরদিন ওই ব্যাট দিয়েই খেলতে নেমেছিলাম। পরেরদিন হ্যামিল্টনে খেলতে নেমেছিলাম ওই নতুন ব্যাট নিয়ে। যে সময় আমি একশ করি তখন ব্যাটটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। আমার টেস্টের প্রথম একশ, ওই ব্যাটটার সঙ্গে আমার অনেক আবেগ জড়িত। আমি ভেবেছিলাম ব্যাটটা অনেকদিন আমার কাছে থাকবে। কিন্তু এমন একটা সুযোগ আসছে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এই ব্যাটটা দিচ্ছি, আমার খুব ভালো লাগছে। ‘
সৌম্য আরো বলেন, ‘সেদিন সেঞ্চুরির আগে ৭০/৭৫ রান যখন তখন বল হাতে লেগে হাত ফুলে গিয়েছিল। ৮০/৯০ রানের দিকে হাতের ব্যথা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। রিয়াদ ভাইকে বলেছিলাম ভাই আমি আর ব্যাট করতে পারব না। এই সময় একটা দুইটা ওভার আপনি ব্যাট করেন, আমার হাতের ব্যথা কমতে টাইম লাগবে। তাই যখন সেঞ্চুরি পূর্ণ হয় তখন রিয়াদ ভাইকে গিয়ে বলি ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। রিয়াদ ভাই ওইদিন আমাকে সাহায্য না করলে আসলে আমি সেঞ্চুরি করতে পারতাম না। ‘
উল্লেখ্য গত মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েক দফা লকডাউনের সময় বাড়ানোর পর ১৭ মে পর্যন্ত চলবে লকডাউন। আর সারাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৫৫ জন। আর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৭৭ জনের।
সারাবাংলা / এসএস
[ad_2]