[ad_1]
ইরফান খান ও তার স্ত্রী সুতপা সিকদার। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খান। তার মৃত্যুতে বলিউড পাড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইরফানের প্রয়াণের দু’দিন পর তার স্ত্রী সুতপা সিকদার ইরফানের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে সকলের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। সেই লেখা মন ছুঁয়ে গেছে ইরফানের ভক্তদের। লেখাটির বাংলায় অনুবাদ ইত্তেফাক অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
এটাকে পারিবারিক বক্তব্য কীভাবে বলি যেখানে পুরো পৃথিবী বিষয়টিকে ব্যক্তিগত ক্ষতি হিসেবে নিয়েছে? নিজেকে একা ভাবা শুরু করবো কেমন করে যখন লক্ষাধিক মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন? সবাইকে নিশ্চিত করতে চাই যে আমি কিছু হারাইনি, বরং আমি পেয়েছি। তিনি আমাদেরকে যা শিখিয়ে গিয়েছেন তা পেয়েছি। এখন আমরা সেই পথে হাঁটার সুযোগ পাবো। তবুও আমি কিছু বিষয় জানাতে চাই যা কেউ এখনও জানেন না।
এটা আমাদের জন্য অবিশ্বাস্য। কিন্তু আমি ইরফানের ভাষায় বলতে চাই, ‘এটা ম্যাজিকেল’। ও থাকুক বা না থাকুক, ও কখনও একভাবে জীবন যাপন করতে চায়নি। ওর বিরুদ্ধে আমার একটাই ক্ষোভ, আমার অভ্যাস সারাজীবনের জন্য খারাপ করে দিয়েছে। পারফেকশনের প্রতি তার ঝোঁকের কারণে সাধারণ কোনো কিছু এখন আর আমার ভালো লাগে না। তিনি সব কিছুতেই ছন্দ খুঁজে পেতেন, এমনকি বেসুরো শব্দ এবং বিশৃঙ্খলাতেও। তাই আমি তার সেই ছন্দে গাইতে এবং নাচতে শিখে গিয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের জীবনটাও অভিনয়ের মাস্টারক্লাস ছিল। তাই যখন নাটকীয়ভাবে সেই ‘অপ্রত্যাশিত অতিথি (ক্যান্সার)’ র আগমন ঘটল, তখন সেই বেসুরো জীবনেও ছন্দ খুঁজে নেয়া শিখে গিয়েছিলাম। ডাক্তারের রিপোর্টগুলো ছিল স্ক্রিপ্টের মতো, পারফেক্ট দেখতে চাইতাম। তার পারফর্মেন্সের কোনো কিছুই মিস করিনি আমি।
এই যাত্রায় দারুণ কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তালিকা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু একজনের কথা না বললেই নয়, অঙ্কোলজিস্ট ডাক্তার নিতেশ রোহতোগি। তিনি শুরু থেকে আমাদের হাত ধরে ছিলেন। ডাক্তার ডান ক্রেল, ডাক্তার শিদ্রাভি এবং অন্ধকারে আশার আলো ডাক্তার সেভান্তি লিমায়ের কথা না বললেই নয়। এই যাত্রা কতটা অদ্ভুত, সুন্দর, আবেগময়, কষ্টের এবং উত্তেজনাপূর্ণ ছিল তা বর্ণনা করা সম্ভব না। এই দুই বছর ছয় মাসের যাত্রা আমার জন্য একটা নাটকের মতো ছিল যেখানে অর্কেস্ট্রা বাদকের চরিত্রে ছিল ইরফান। আমাদের ৩৫ বছর একসঙ্গে কাটিয়েছি, এটা বিয়ে ছিল না, ঐক্য ছিল। আমাদের ছোট পরিবারকে একটি নৌকায় দেখতে পাচ্ছি, যেই নৌকা ইরফানের নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করছি আমার সন্তানরা তাদের বাবার দেখানো পথে ঝড়ের মাঝেও নিরাপদে নৌকাটি চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আমার সন্তানদেরকে অনুরোধ করেছিলাম তাদের বাবার শেখানো কোনো একটি শিক্ষা সম্পর্কে লিখতে;
বাবিল: ‘অনিশ্চয়তার মাঝে আত্মসমর্পণ করতে শিখো এবং পৃথিবীর প্রতি বিশ্বাস রাখো।’
আয়ান: ‘মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখো, মন যেন তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।’
চোখের পানি ঝরবেই। ইরফানের কবরে আমরা তার পছন্দের ফুল হাসনাহেনার একটি চারা রোপণ করবো। সময় লাগবে, কিন্তু একসময় এই ফুল ফুটবে এবং সৌরভ ছড়াবে তাদের মাঝে যাদেরকে আমি ভক্ত না বলে পরিবার বলি।
ইত্তেফাক / বিএএফ
[ad_2]